রবিবার ০৫ মে ২০২৪
Online Edition

বিএনপি জাতীয় ঐক্য গড়ে  রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করবে

স্টাফ রিপোর্টার: আওয়ামী লীগ না চাইলেও জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি জাতীয় ঐক্য গড়ে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান করবে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একইসাথে তিনি বলেন, বশংবদ রাজনীতির কারণেই রোহিঙ্গা সমস্যা মোকাবিলায় সরকার জাতীয় ঐক্য করতে ভয় পাচ্ছে। গতকাল শনিবার বিকেলে এক আলোচনা সভায় নিউইয়র্কে জাতীয় ঐক্যের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব একথা বলেন। তিনি বলেন, আপনারা (সরকার) এখন পর্য়ন্ত মিয়ানমারের রাখাইনে যা হচ্ছে তাকে গণহত্যা বলতে পারলেন না, এখন পর্যন্ত একে আপনারা গণহত্যা বলেননি, এখন পর্যন্ত মিয়ানমার সরকারের কোনো নিন্দা করেননি। এই বিষয়গুলো থেকে বুঝা যায় এখনো আপনারা সেই বংশবদ রাজনীতির মধ্যে রয়েছেন। এখনো আপনারা(সরকার) ভয় পান অন্যান্যরা যারা মিয়ানমারকে সমর্থন দিচ্ছে তারা আপনাদের প্রতি বিরাগভাজন হয়ে যান সেজন্য আপনারা একথা(জাতীয় ঐক্য না করার) বলছেন। এখানেই পার্থক্যটা সেজন্য আমাদের(বিএনপি) সাথে ঐক্য করতে চাইবে না। 

রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে মরহুম কাজী জাফর আহমেদের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর)। সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এটিএম ফজলে রাব্বি চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও  যুগ্ম মহাসচিব এএসএম শামীমের পরিচালনায় আলোচনা সভায় জাতীয় পার্টির মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড.মাহবুবউল্লাহ, জাগপা‘র চেয়ারম্যান রেহানা প্রধান, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএমএম আলম, আহসান হাবিব লিংকন, নওয়াব আলী আব্বাস খান, মজিবুর রহমান, হোসনে আরা হাসান, মরহুম নেতার মেয়ে কাজী জয়া প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

শুক্রবার নিউইয়র্কে  সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, বিএনপির মতো একটি সন্ত্রাসী দল, জঙ্গিবাদী দল-তাদের সাথে বসতে হবে। তাদের সাথে বসে সমাধান করতে হবে-এই কথাটা আর কেউ বলবেন না, যেটা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য না। বিএনপির বিরুদ্ধে হত্যা, দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগ তুলে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন করেন, বিএনপিকে কেন টেনে আনেন বলেনতো? কেন তাদের সঙ্গে বসতে হবে, কেন তাদের রক্ষা করতে হবে? রোহিঙ্গা ইস্যুতে অন্যান্য বিরোধী দলসহ বিএনপি সরকারের সঙ্গে আসবে কি না এক সাংবাদিক জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, বিরোধীরা কী বললো না বললো সেটা নিয়ে তো রাজনীতি করি না।

সরকারের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীল বলেন, আমাদের সাথে ঐক্য অন্য কোনো কারণে করতে বলিনি, জনগণের ঐক্য তৈরি করতে বলেছি। আমি বলব, এই সংকীর্ণতা বাদ দিয়ে, এই আমিত্ব বাদ দিয়ে আসুন সমগ্র জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করুন। ইনশাল্লাহ জনগণের ঐক্য তৈরি করেই আমরা এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে সক্ষম হবো। মিয়ানমারের ব্যাপারে, রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে আমাদের কথা খুব স্পষ্ট, এই অমানবিক আচরণ গণহত্যা বন্ধ করতে হবে অবিলম্বে।

১৯৭৮ সালে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও ১৯৯২ সালে বেগম খালেদা জিয়ার আমলে রোহিঙ্গা শরনার্থীদের ‘সফল আলোচনা ও চুক্তির মাধ্যমে’ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি তুলে ধরেন ফখরুল। তিনি বলেন, আমরা বলতে চাই, মিয়ানমারের সাথে আলোচনা ও কথা বলার এটাই ভিত্তি হতে পারে। দুর্ভাগ্য গণচীন পক্ষে একদিন শোষিত নির্যাতিত মানুষেরা দাঁড়িয়েছিলো সেই গণচীনও রোহিঙ্গা সমস্যাগুলো বুঝতে ব্যর্থ হচ্ছে। যে ভারত ১৯৭১ সালে তাদের দেশে গণহত্যার বিপক্ষে আমাদেরকে আশ্রয় দিয়ে মুক্তিযুদ্ধকে সাহায্য দিয়েছিলো তারাও আজকে এই সমস্যা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা অনুরোধ করবো জনগণের পাশে এসে দাঁড়াতে, এই হতভাগ্য রোহিঙ্গারা হিন্দু না মুসলমান এই প্রশ্নে আমরা যেতে চাই না। তারা মানুষ। আজকে তারা একটা ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে রয়েছে, তাদেরকে মুক্ত করতে হবে, তাদেরকে তাদের দেশে ফেরত পাঠাতে হবে। এটা বিশ্বমানবতার দায়িত্ব ও কর্তব্য।

 রোহিঙ্গা সমস্যার বিষয়টি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে তোলার জন্য সংস্থার মহাসচিবকে ধন্যবাদ জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, জাতিসংঘের মহাসচিব রোহিঙ্গা বিষয়টি আলোচনার জন্য নিরাপত্তা পরিষদের চিঠি দিয়েছেন। আমি ধন্যবাদ জানাই ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী-ফাস্ট লেডিকে সমস্যার প্রকটতা অনুধাবন করে বাংলাদেশে এসে সরকারের চোখ খুলে দিয়েছেন। ধন্যবাদ জানাই দেশের কোটি কোটি মানুষকে তারা আজকে ত্রাণ নিয়ে ছুটে যাচ্ছেন কক্সবাজারে এই হতভাগ্য দুর্গত মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াবার জন্যে।

তিনি বলেন, এই সরকার পারবে না। কারণ তারা তো জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন, জনগণের সাথে কোনো সম্পর্ক নেই। জনগণের কোনো সমস্যার দিকে তাদের নজর নেই। আজকে চালের দাম বাড়ছে, তাদের লোকেরা এখনো চাল চুরি করছে, গম চুরি করছে যা পারছে তা চুরি করছে। স্টক মার্কে  শেষ করেছে, ব্যাংক শেষ করেছে, মাইক্রো ফাইন্যান্সে যা সব ছিলো সব কিছু নষ্ট করেছে। এখন তারা ত্রাণ লুটপাট করার একটা ব্যবস্থা শুরু করতে যাচ্ছে। ক্ষমতাসীনরা উন্নয়নের নামে ‘মেগা প্রকল্প’ বানিয়ে ‘মেগা লুট’ করছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব। অনুষ্ঠানে মরহুম কাজী জাফরের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসির্ অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যাটা যারা ক্ষমতাসীন দলের সমস্যা না, এটা একটি জাতীয় সমস্যা। এই সমস্যা সমগ্র জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে সমাধান করবে অন্য কেউ না। এক্ষেত্রে গতকাল(শুক্রবার) আমাদের প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্কে যা বললেন- কাদের সাথে কথা বলবো ----। একজন রাজনৈতিক প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের পক্ষে ভূমিকা রাখছেন তার পক্ষে এই ধরনের কথা বলা অন্যায় কথাটা ব্যবহার করতে চাচ্ছি না, এটা মোটেই যথোপযুক্ত না। এটা তার মুখ থেকে উচ্চারিত হওয়া ঠিক ছিলো না। কারণ বাংলাদেশের ক্ষতি হলে শুধু আওয়ামী লীগের ক্ষতি হবে তাতো না, সবারই ক্ষতি হবে। এ ব্যাপারে সমাধান পেতে হলে সবাই মিলে সমাধান বের করতে হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ